শেরপুরে ভুয়া কৃষক সাজিয়ে ধান সরবরাহের অভিযোগ !

by শেরপুর কণ্ঠ ডেস্ক
3 মিনিটের পড়া

শেরপুর কন্ঠ ডেস্ক : শেরপুর খাদ্য গুদামে ভুয়া কৃষক সাজিয়ে ধান সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে। ভুয়া কৃষক সাজানো ঘটনায় একটি সিন্ডিকেটের দুইজনকে সদর থানা পুলিশ আটক করলেও কোন অভিযোগকারী না পাওয়ায় তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। 

ভুয়া কৃষক সাজিয়ে তাদের নামে ব্যাংক হিসাব খুলে টাকা উত্তোলন কারী সিন্ডিকেটের বিষয়ে জানা গেছে, প্রথমে একজনকে কৃষক বানিয়ে কার নামে ব্যাংক হিসাব খোলা হয়। ওই ব্যাংকের প্রতি হিসাবে ১লক্ষ ৮হাজার টাকা আসে, কিসের টাকা আসে হিসাবধারী জানে না। এনিয়ে ২৫ জুন বৃহস্পতিবার দুপুরে শেরপুর অগ্রণী ব্যাংকে বানানো কৃষক ও গুদাম সিন্ডিকেটের কজনের সাথে বাক বিতন্ডা হলে পুলিশ দুজনকে আটক করে। দিন ভর নানা সমালোচনায় ও পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। তবে আটক দুই যুবককে গভীর রাতে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।

পুলিশের দাবী অভিযোগের বাদী পাওয়া যায়নি। তাই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। গুদাম সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে ওই দুই যুবক ফুজাইল ও  মুছা দীর্ঘ দিন ধরে গুদাম সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্য।

জানা গেছে, সরকার আগামি ৩১ আগস্ট পর্যন্ত প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে সদর খাদ্য গুদামে ২ হাজার মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ অভিযানে চলছে । বোরো সংগ্রহের আগে খাদ্য বিভাগের এ্যাপসে অনেক কৃষক আবেদন করে লটারিতে বিজয়ি হলেও ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায়, লাভ তেমন না হওয়ায় ও সরকারি কঠিন শর্ত মেনে ধান দেওয়া জটিল বলে সরকারকে ধান দিতে কৃষকের তেমন আগ্রহ নেই। বোর সংগ্রহে ভাটা পড়লে সরকার সিদ্ধান্ত নেয় লটারিতে বিজয়ি বা যে কোন কৃষক জাতীয় পরিচয় পত্র ও কৃষি অফিসের প্রত্যয়ন পত্র দিয়ে ধান দিতে পারবে। এই সুযোগে গুদামের সিন্ডিকেট বোরো ধান সংগ্রহে ভুয়া কুষক দিয়ে ব্যাংক হিসাব খোলে গুদামে ধান সরবরাহ করা শুরু করে।

সুত্র জানায়, ওই সিন্ডিকেট সাত দিনে শেরপুর পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের একই মহল্লা কসবা নামা পাড়ার চারশত লোক দিয়ে চারটি ব্যাংকে চারশত হিসাব খোলে। হিসাবধারী ও ওই আটক হওয়া ওই দুই যুবকের বাড়ী শেরপুর শহরের কসবা নামা পাড়া এলাকায়। সিন্ডিকেট মঙ্গলবার থেকে অন্তত ৮০টি একাউন্টে খাদ্য গুদাম থেকে ১লক্ষ ৮হাজার করে টাকা জমা হয়। বুধবার কয়েকটি ব্যাংক হিসাব থেকে অন্তত ৪০জন ওই পরিমান টাকা তুলে নেয়। এদের মধ্যে অধিকাংশই নারী।

বিশ্বস্ত সুত্র জানায়, টাকা তোলার সাথে সাথে সিন্ডিকেট হিসাবধারী প্রত্যেককে দুই হাজার টাকা দিয়ে বাকী টাকা সিন্ডিকেট নিয়ে নেয়। বৃহস্পতিবার একই প্রক্রিয়ায় টাকা তুলে ওই দুই যুবক টাকা নিয়ে নিতে চাইলে বাজে বিপত্তি। ব্যাংকের ভিতর  গন্ডগোল শুরু হলে পুলিশ, সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষ এসে পড়ে। একাউন্ট হোল্ডারদের দাবি তারা জানেই না কেন তাদের নামে একাউন্ট খোলা হয়েছে। এই টাকা ওদের সার বীজ কেনার জন্য সরকার দিচ্ছে বলে সিন্ডিকেটের সদস্যরা জানিয়েছিল। কেউ কেউ মনে করেছিল ব্যাংক ঋণ করে দিয়ে টাকা নিয়ে নিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ঋণ আতংকে আমরা টাকা দিতে চাইনি।

এ নিয়ে পুলিশ গুদাম সিন্ডিকেটের দুইজন এবং ভোক্তভোগী কয়েকজন মহিলা হিসাবধারীকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে। 

শেরপুর সদর উপজেলার দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সুপার আব্দুল করিম ও সদর থানার ওসি জুবায়দুল ইসলাম ব্যাংক ও গুদামে গিয়ে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। ব্যাংকে সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসবাদে পরিস্কার হয়েছে ফুজাইল ও মুছা ছাড়াও গুদামের একটি বড় সিন্ডিকেট ভুয়া কৃষক বানিয়ে অত্যন্ত সুকৌশলে লভ্যাংশ হাতিয়ে নিচ্ছে। তবে বিষয়টি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কানে যাওয়ার সাথে সাথে খাদ্য গুদামে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

কসবা নামা পারার ব্যাংক হিসাবধারী শিল্পি আক্তার বলেছেন, আমাদের এলাকার বিশিষ্ট খাদ্য গুদাম ব্যবসায়ী আনসার হাজীর ছেলে ময়না এলাকা থেকে অনেকের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয় পত্র নিয়ে ব্যাংক হিসাব খুলে এবং বলেছে সরকার থেকে সার বীজ দিবে। আমরা প্রকৃত কোন কৃষক নই। ব্যাংকে হিসাব খুলার দুদিন পরে জানতে পারি আমাদের সবার একাউন্টে এক লক্ষ আট হাজার টাকা আসছে। এটা কিসের টাকা আমরা জানি না।

শেরপুর খাদ্য গুদামের সংরক্ষণ ও চলাচল কর্মকর্তা (এসএমও) সোহেল রানা জানিয়েছেন, নিয়ম মেনেই ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে। কোন সিন্ডিকেট কি করছে জানা নাই। টাকা কৃষক ছাড়া কাউকে দেওয়ার সুযোগ নেই।

শেরপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নাজমুল হক ভূইয়া  জানিয়েছে, এক এলাকায় এত সংখ্যক কৃষকের নামে ব্যাংক হিসাব হয়ে থাকলে বিষয়টি সন্দেহ জনক। ওরা কৃষক কিনা, যথাযথ প্রক্রিয়া মানা হয়েছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কোন অনিয়ম হলে ব্যবস্থা।

শেরপুর সদর থানার ওসি জুবায়েদুল ইসলাম বলেছেন, কোন অভিযোগকারি পাওয়া যায়নি। তাই মধ্যরাতে ওই দুইজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। 

আরো খবর

আপনার মতামত দিন