শেরপুর কন্ঠ ডেস্ক : ভারতের মেঘালয় রাজ্য ঘেষা শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী তিন উপজেলায় অবৈধ মাদক ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারিদের দৌরাত্ম চরম আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব চোরাকারবারিদের থামাতে সীমান্তের বিজিবি, র্যাব, পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন দফায় দফায় অভিযান চালিয়ে সীমান্তের ওপার থেকে চোরা ভাবে আনা পণ্য আটক এবং বহনকারীদের গ্রেফতার করেও থামছে না তাদের দৌরাত্ম। ওই সব সীমান্তের পাহাড়ি এলাকায় অবৈধ বালু ও পাথর উত্তোলন, মাদক ব্যবসায়ী ও চোরাচারীদের যেন এক আলাদা রাজ্য গড়ে উঠেছে।
অবৈধ বালু ও পাথর উত্তোলন এবং ভারতের মেঘালয় সীমান্তের ওপার থেকে বিভিন্ন মাদক ও প্রসাধনী পণ্য আসার বিষয়ে স্থানীয় সাংবাদিকরা বিভিন্ন সময়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। ফলে বিক্ষুব্ধ ওইসব চোরাকারবারীদের গডফাদার গত ৭ মাসে ১৩ জন সাংবাদিক উপর হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। এসব হামলার ঘটনায় মামলার পাশাপাশি স্থানীয় প্রেসক্লাব এবং সাংবাদিক নেতৃবৃন্দরা প্রতিবাদ ও নানা কর্মসূচি পালন করে আসলেও চোরাকারবারীরা থামেনি। মামলার পরপরই তারা উচ্চ আদালত থেকে জামিনে এনে প্রকাশ্যে দিবালোকে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং কেউ কেউ শো ডাউন করে জানান দিচ্ছে তাদের শক্তিমত্তার কথা।
বিভিন্ন সময়ে হামলার শিকার সাংবাদিকদের সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি রাতে জেলার শ্রীবরদী উপজেলার কর্ণঝোড়া মেঘাদল বাজার মোড়ে অবৈধ মাদকের চালানের ভিডিও করতে গেলে চার জন সাংবাদিকের গাড়ি বহরে হামলা চালায় ডন মাসুদ ওরফে বালু মাসুদ নামে এক চোরাকারবারীর সাঙ্গোপাঙ্গরা।
৯ মে শুক্রবার বিকেলে নালিতাবাড়ী উপজেলার নাকুগাঁও স্থলবন্দর থেকে সংবাদ সংগ্রহ শেষে শেরপুর ফেরার পথে নালিতাবাড়ী বাইপাস চৌরাস্তা এলাকায় সন্ত্রাসী হামলায় গুরুতর আহত হয় দেশ রূপান্তরের জেলা প্রতিনিধি শফিউল আলম সম্রাট।
২৬ মে জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার কাটাবাড়ি পাহাড়ি এলাকায় সম্ভাব্য হাতির অবাশ্রমের স্থান পরিদর্শনে আসেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এসময় স্থানীয় সাংবাদিকরা অবৈধ বালু উত্তোলন নিয়ে প্রশ্ন করায় বিক্ষুব্ধ হয় স্থানীয় চোরাকারবারীর গডফাদার মিজান চেয়ারম্যান। পরে উপদেষ্টার গাড়ি চলে যাওয়ার সময় পেছনে থাকা সাংবাদিকদের উপর হামলা চালায় মিজান চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী বাহিনী। এতে আহত হয় ছয় সাংবাদিক।
১৫ ই আগস্ট রাতে জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার সন্ধ্যাকূড়া সীমান্ত এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের হামলায় গুরুতর আহত হয় দৈনিক ইত্তেফাকের উপজেলা প্রতিনিধি মোঃ খোরশেদ আলম। বর্তমানে সে শেরপুর জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
উল্লেখিত প্রত্যেকটি ঘটনায় পৃথক মামলা দায়ের করা হলে দু-একটিতে কেউ কেউ গ্রেফতার হলেও আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে আসছে সহজেই। আবার কেউ কেউ উচ্চ আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে এসে এলাকায় মোটরসাইকেল দিয়ে শোডাউন করেছে। এসব চোরাকারবারবাদীদের বিষয়ে স্থানীয় মানুষ বিভিন্ন সময়ে তাদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করলেও তাদের দৌরাত্ম একটুও কমেনি। তাই জেলার সচেতন মহল মনে করছেন ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত ঘেঁষা শেরপুরের ৩ উপজেলার প্রায় ৪২ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক যেন বিচ্ছিন্ন জনপথ। যেখানে চোরাকারবারিদের মৎসব চলছে।
এ বিষয়ে শেরপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ হাসান বাদল বলেন, সাংবাদিকদের হত্যা নির্যাতনের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমরা আমাদের কাজ করবো। সরকার ও আইন রাস্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ রক্ষা করতে না পারলে রাস্ট্র ও আইনের শাষন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। ক্ষমতাওয়ালারা নিজেরা আয়নায় চেহারা দেখতে পারবে না। তবে শেরপুরে প্রতিটি ঘটনার মামলা হয়েছে। কেউ কেউ ধরাও পড়েছে। কিন্ত বন ও পরিবেশ উপদেস্টার সামনে সাংবাৃদিকৃদে যে ভাবে মারপিট করা হয়েছে তা দুঃখজনক। আরও দুঃখজনক মামলার আসামি দুর্দান্ত প্রতাপশালী মিজান চেয়ারম্যান এখনও ধরা-ছোয়ার বাইরে।
এ বিষয়ে শেরপুর জেলার পুলিশ সুপার মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিকদের প্রতিটি ঘটনার মামলা হয়েছে। অভিযুক্তদের ধরে পুলিশ আদালতে সোপর্দ করেছে। পুলিশ এখানে জিরো টলারেন্স।
