শেরপুর কন্ঠ ডেস্ক : শেরপুর জেলার নকলা উপজেলাবাসীর জন্য স্বাস্থ্য সেবায় নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে।
গত ২৮ জুন শনিবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রথমবারের মত সফলভাবে একটি সিজারিয়ান অপারেশন (সিজার) সম্পন্ন হয়েছে।
সিভিল সার্জন ডা. মুহাম্মদ শাহিন-এর দিকনির্দেশনায় এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফার ভূমিকায় এই অপারেশনটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়। তাঁদের দক্ষ নেতৃত্ব, আগ্রহ ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় বহুদিনের প্রত্যাশা আজ বাস্তবে রূপ নিয়েছে।
এ অপারেশনে নেতৃত্ব দেন গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. উম্মে রাকিবা জাহান মিতু, যিনি নকলার গর্ব এবং কৃতি সন্তান হিসেবে সুপরিচিত। তাঁর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান ও অভিজ্ঞতা, ও নিরলস স্বদিচ্ছায় এই অপারেশনটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়, যা নকলার স্বাস্থ্যসেবায় একটি নতুন অধ্যায় যুক্ত করলো।
অপারেশন চলাকালে আরও উপস্থিত ছিলেন এনেস্থেসিয়া বিশেষজ্ঞ ডা. রিয়াজুল করিম, শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. ইফতিখারুল আলম তানভীর, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. নাঈমা ইসলাম পিংকি সহ হাসপাতালের নিবেদিত নার্সবৃন্দ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী।
নকলা উপজেলার জনগণের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল এমন একটি সেবা চালু হোক, যাতে মা ও নবজাতকের উন্নত চিকিৎসা উপজেলা পর্যায়েই নিশ্চিত হয় এবং উচ্চতর হাসপাতালে না গিয়েও জরুরি সেবা গ্রহণ করা সম্ভব হয়।
এই ঘটনায় অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। এক নাগরিক মন্তব্য করেন, “এখন আমাদের মায়েরা নিরাপদে এখানেই সিজার করতে পারবেন। এটা বিশাল আশার খবর।”
এই উদ্যোগের মাধ্যমে নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পেলো। আশা করা যায়, ভবিষ্যতে এখান থেকে আরও উন্নত ও বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবা প্রদান সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা জানায়, মাত্র ১০ সয্যার নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ১৯৭৮ সনে প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর ২০০৮ সনে ৫০ শয্যার অবকাঠামো ভবন তৈরির কাজ শুরু হয়। এরপর অবকাঠামো নির্মাণ শেষে ২০১১ সালে তৎকালীন সরকার স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের মাধ্যমে অপারেশন থিয়েটার কক্ষসহ অন্যান্য কক্ষের কাজ শেষ করে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু অপারেশন থিয়েটারের যন্ত্রপাতি ও লোকবল না থাকায় সেটি আর চালু করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে গত দুই বছর ধরে স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে দফায় দফায় যোগাযোগ করে অপারেশন থিয়েটারের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও যন্ত্রপাতি সহ পূর্ণাঙ্গ কাজ সম্পন্ন করা হয়। এরপর গত ২৮ জুন সর্বপ্রথম একটি সিজারিয়ান এর সফল অপারেশন করা হয়। যদিও সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি ভয় কাজ করলেও সফলভাবে সিজারটি হওয়ার পর স্থানীয় মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। আশা করি এখন থেকেই নিয়মিত এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অসহায় ও দরিদ্র মানুষের বিনামূল্যে সিজার করা হবে। যদিও এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজারের ক্ষেত্রে যাবতীয় ওষুধপত্র সরকারিভাবে সরবরাহ না করা হলেও স্থানীয়ভাবে আমরা তা ব্যবস্থা করছি।