শেরপুর কন্ঠ ডেস্ক : খুন হলেই শেরপুর জেলায় বাড়িঘর লুটপাট,ভাংচুর,বসতবাড়ী মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া ও অগ্নি সংযোগের সংস্কৃতি থামছেই না।হত্যার ঘটনা হলেই অভিযুক্ত, অভিযুক্তের স্বজনসহ সাধারণ মানুষও বাদ যাচ্ছে না।এই লুটপাটে তৃতীয়,চতুর্থ পক্ষরা যুক্ত হয়ে সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি করছে।মামলা করলেও খুনের মত বড় ঘটনায় লুটপাট,ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগের মত অপরাধ চাপা পড়ে যায়।খুন হলেই কয়েকদিন ধরে চলতে থাকে এসব অপরাধ।খুন সংঘটিত হওয়ার পরে অতিরিক্ত উত্তেজনার মধ্যে কেউ এসব থামাতেও সাহস পায় না।বিশেষ একটি সুত্র জানিয়েছে খুন সংঘটিত হওয়ার সাথে সাথে এলাকার আশেপাশের অপরাধি চক্র লুটপাটে অংশ নেয়।এই সুযোগে পূর্বের শত্রুতার শোধ নিতেও তৎপরতা দেখা গেছে।এসব ঘটনায় গ্রাম ও চরাঞ্চলের মানুষ বেশী আক্রান্ত হচ্ছে।সাধারণ মানুষের দাবী খুনের অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সাথে সাথে এলাকায় যৌথ বাহিনী নিযুক্ত থাকুক।আর খুনি ও লুটপাটের বিচার এক সাথে হোক।পুলিশ সুপার বলছেন সকল অপরাধিদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে।
জানা গেছে, ৫ আগষ্ট ২০২৪ সালের এ বছরের চলতি সময় পর্যন্ত জেলায় ৩৫টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। ৫আগষ্ঠ পরবর্তি পুলিশের ভগ্নদশার কারণে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে যায়।এই সুযোগে অল্প সময়ে এত সংখ্যক খুন ও প্রতিটি খুনের পরেই শতশত বাড়ীঘরে লুটপাট ও অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছে।স্বস্থির খরব হলো খুনের সকল অভিযুক্তদের পুলিশ আইনের হেফাজতে এনেছে এবং লুটপাট ও অগ্নি সংযোগের মামলা গুলোর চার্জসিটের প্রস্ততি শেষ পর্যায়ে।তবে গত ১৪ ফেব্রোয়ারি শেরপুরের দিঘারপাড়ে আলোচিত একটি হত্যাকান্ড পরবর্তি ব্যাপক লুটপাটের প্রস্ততি থাকলেও যৌথ বাহিনী এলাকার মানুষ নিয়ে এই অপরাধটি হতে দেয়নি।অন্তত দশদিন পুলিশ ওইখানে পাহাড়া বসিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করতে পেরেছে।তবে জেলায় এই সংস্কৃতির শুরু হয়েছে শ্রীবরর্দীর ভায়াডাঙ্গায় ২০২২ সালের ১১ এপ্রিল পুলিশের সামনে শেখবর আলীকে খুনের মধ্য দিয়ে।তখন অভিযুক্তদের অন্তত ২০টি বাড়ীতে কয়েকদিন ব্যাপি চলে এই লুটপাট।তার পূর্বে এমন না ঘটলেও তখন থেকেই এই সংস্কৃতি আর থামেনি।

সরেজমিনে জানা গেছে,শেরপুর জেলার সদর উপজেলার চরমোচারিয়া ইউনিয়নের হরিনধারা গ্রামে গত ২২ ফেব্রুয়ারী দুপক্ষের সংঘর্ষে একজন খুন হয়।তারপর থেকেই হরিনধরা পশ্চিমপাড়া গ্রামে শুরু হয় লুটপাট।দিনে রাতে কয়েকদিন চলে এই অপরাধ।গত দেড় মাসে এই গ্রামের অন্তত শতাধিক বাড়িঘরে লুুটপাট চলেছে।গ্রামগুলো ঘুরে দেখা গেছে বাড়িগুলোর টিন,বেড়া,ইট পর্যন্ত গরু,ছাগল,হাস,মুরগী,সেচ পাম্প কিছুই নেই।ওই গ্রামের কয়েক শতাধিক মানুষ শনিবার খুন ও লুটপাটে বিচার চেয়ে মানববন্ধন করেছে।গত ২ ডিসেম্বর শেরপুরের চরশেরপুর এলাকায় একটি খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত ও নীরিহ কয়েকজনের সব কিছু নিয়ে গেছে। ভিটাবাড়ীর মাটি পর্যন্ত ভ্যকু দিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে বসতবাড়ী।এ নিয়েও মামালা মানব বন্ধন হয়েছে।
শেরপর প্রেসক্লাবের কার্যকরি সভাপতি রফিক মজিদ বলেছেন দেশ এগিয়ে যাচ্ছে কিন্ত এখন ল এন্ড ওয়ার্ডার ফিরিয়ে আনতে যৌথ বাহিনীসহ সাধারণদের এগিয়ে আসা উচিৎ।
জেলার পিপি এ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান বলেন,খুন, লুটপাট, অগ্নি সংযোগ বড় অপরাধ।সব অপরাধিদে দ্রুত আইনের আওতায় আনা না হলে এসব চলতেই থাকবে।পূর্বের বিচারহীনার সংস্কৃতিই এসবকে উৎসাহিত করছে।এখন আইনের শাষন প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।যাতে করে খুন ও খুন পরবর্তি একটি ঘটনাও যাতে না ঘটে তার জন্য সংশ্লিষ্ঠদের তৎপরতা বৃদ্ধি করতে হবে।

শেরপুর জেলা পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম বলেন খুনের পরে আসামীরা বাড়িতে অনুপস্থিত থাকার সুযোগে বাড়িঘর লুটপাট করে নিয়ে যায়।খুনের ভিকটিমরা বোঝে না লুটপাট,অগ্নিসংযোগে খুনের বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।আইনে সকল অপরাধের বিচার আছে।শেরপুরে যে কয়টি লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে অভিযোগও নিয়েছি।খুনের বিচার তো হবেই তবে লুটপাট,অগ্নি সংযোগের বিচারও হবে।যারা এখনো লুটপাটের অভিযোগ দেয়নি,অভিযোগ দিলেই ব্যবস্থা।ভেঙ্গে পড়া পুলিশ শক্ত হয়ে দাড়াতে পারলেই অপরাধ কমবে।এই শক্ত করার কাজটিই করা হচ্ছে।