শেরপুর কন্ঠ ডেস্ক : নানা জল্পনা কল্পনা শেষে শেরপুর জেলার উত্তরের জনপদ ভারতীয় সীমান্তঘেষা নালিতাবাড়ি ও ঝিনাইগাতী উপজেলার সবকটি পাহাড়ি নদীর বালুমহাল বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন।
নদী-পাহাড় ধংসের হাত থেকে রক্ষা করতে ৮ এপ্রিল মঙ্গলবার শেরপুর জেলা প্রশাসকের সাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও গতকাল গভীররাত থেকে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
১০ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সকালে শেরপুর জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।

এদিকে এই খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে আনন্দের বন্যা বয়ে যায় স্থানীয় সচেতন মানুষ ও পরিবেশ বাদী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে। তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে এর বাস্তবায়ন চায়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন , ২০১০ এর ধারা ৯(৪) অনুযায়ী ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের অনুমোদনের প্রেক্ষিতে শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ি ও ঝিনাইগাতী উপজেলা সকল বালুমহাল বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো।
বালুমহাল গুলো হলো, নালিতাবাড়ি উপজেলার চেল্লাখালি নদীর উপর বাতকুচি, পলাশীকুড়া, নন্নী, তাজুরাবাদ, সন্যাসীভিটা মৌজা।

ভোগাই নদীর উপর কালাকুমা, হাতীপাগার, নয়াবিল, ফুলপুর, মন্ডলিয়াপাড়া মৌজা।
এছাড়াও ভুরুঙ্গা ও আন্ধারুপাড়া-বাইগরপাড়া- বুরুঙ্গা, আন্দারুপাড়া, বাইগরপাড়া মৌজা।
অন্যদিকে ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশি-ডাকাবর নদীর উপর আন্ধারুপাড়া-বাইগরপাড়া, বাদেচল্লীশকাহনিয়া, বারুয়ামারি, হলদীগ্রাম, বাখরাবাদ মৌজা।

পাগলারমুখ এলাকার বড় মালিঝিকান্দা, হাতিবান্দা, ঘাগড়া লষ্কর, পশ্চিম বেলতৈল মৌজা। এছাড়াও তাওয়াকুচা, বনগাঁও ও বাদেচল্লিশকাহনিয়া মৌজায়।
এ ব্যাপারে পরিবেশবাদী সংগঠন ‘গ্রীণ ভয়েজ’ এর সাধারণ সম্পাদক মারুফুর রহমান বলেন, আমরা গ্রীণ ভয়েজের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ শেরপুরের নানা পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকাতে কাজ করে যাচ্ছি। এর ধারাবাহিকতায় শেরপুরের গারো পাহাড়ের বিভিন্ন নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি প্রদান, মানববন্ধন সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছি। গতকাল রাতে শুনলাম বালুমহাল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে জেলা প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সাধুবাদ জানাই। তবে এখন থেকে যেন অবৈধভাবে বালু উত্তোলন না হয় সেটা প্রশাসনের নজরদারিতে রাখতে হবে।

সম্প্রতি অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা সুপ্রিম কোর্টের তরুণ আইনজীবী ব্যারিস্টার শাখাওয়াত হোসেন বলেন, জেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগ একদম সময় উপযোগী। আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আমাদের নদী-পাহাড় রক্ষার্থে যে দাবি জানিয়েছি তা আমলে নেয়ায় আমরা খুশি। তবে শুধু প্রজ্ঞাপন দিয়ে দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। আমরা বাস্তব ক্ষেত্রে সম্পূর্ণরূপে বালু উত্তোলন বন্ধ চাই। আজ থেকে যেন এক ইঞ্চি যায়গাতেও বালু না উঠে।
এ ব্যাপারে শেরপুরের জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, আমরা সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সাথে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করেছি। ইতোমধ্যে দুইটি উপজেলার নদী-পাহাড় রক্ষার্থে বালু উত্তোলন স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করে বালুমহাল বিলুপ্ত করা হয়েছে। এখন থেকে সকল বালু উত্তোলন অবৈধ। জেলা প্রশাসন বালু উত্তোলন বন্ধে কঠোর অবস্থানে থাকবে।