Home » সীমান্তে কমে না সরকারি নিলামের বালু! আইনের ফাঁকফোকরে উজ্জীবিত বালুদস্যুরা অযাচিত সময় বৃদ্ধির অভিযোগ ইউএনও’র বিরুদ্ধে

সীমান্তে কমে না সরকারি নিলামের বালু! আইনের ফাঁকফোকরে উজ্জীবিত বালুদস্যুরা অযাচিত সময় বৃদ্ধির অভিযোগ ইউএনও’র বিরুদ্ধে

by শেরপুর কণ্ঠ ডেস্ক

শেরপুর কন্ঠ ডেস্ক : ১২ মার্চ পর্যন্ত সাত দিনের সময় বেঁধে দিয়ে জব্দকৃত অবৈধ বালুর স্তুপ সরকারিভাবে নিলাম হলেও সেই সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও কমছে না স্তুপের বালু। প্রতিদিন ট্রাকে ট্রাকে মূল্যবান এই লাল বালু বিক্রি হলেও নিলামের বালুতে হাত দিতে হচ্ছে না সীমান্তের বালুদস্যুদের। ইজারাবহির্ভূত স্থান থেকে বালু তুলে বৈধ নিলামের কাগজ দিয়ে অবৈধ বালু বিক্রির মহোৎসব চলছে। অভিযোগ উঠেছে, এই সুযোগ করে দিচ্ছেন শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জাবের নিজেই। আবার জেলা প্রশাসন বলছে, অবৈধ বালুর সাথে যারাই সম্পৃক্ত থাকবে, কোন ছাড় নয়।

জানা যায়, শ্রীবরদী উপজেলায় সরকারের পক্ষ থেকে কোন নদীতেই বৈধ বালু মহালের ইজারা দেওয়া হয়নি। গত ৩ ফেব্রুয়ারি উপজেলা প্রশাসনের অভিযানে বালিজুড়ী বাজার সংলগ্ন বালিজুরী-ভায়াডাঙ্গা রোড, বালিজুরী-কামালপুর রোড ও বালিজুড়ী হাই স্কুল রোডে তিনটি স্থানে বিপুল পরিমাণ বালু জব্দ করা হয়। পরবর্তীতে উপজেলা প্রশাসন গত ২ মার্চ জব্দকৃত ওই বালু ৮ লাখ ১৫ হাজার ৮৫০ টাকায় নিলাম করে। নিলাম পান উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুর রহিম দুলাল। পরে তিনি তৃতীয় পক্ষ যুবদল নেতা আবু রায়হান মো. আল বেরুনীসহ কয়েকজনের কাছে ২৪ লাখ টাকায় ওই বালু বিক্রি করে দেন। গত ৫ মার্চ নিলামকারীকে ১২ মার্চ সাত দিনের মধ্যে বালু অপসারণের নির্দেশ দিয়ে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। চিঠিতে আরও বলা হয়, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বালু অপসারণে ব্যর্থ হলে পুনরায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ওইসব বালু জব্দ করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু গত ৯ মার্চ শ্রমিক সংকট ও পানির স্বল্পতার মামুলী কারন দেখিয়ে আরও দশ দিনের সময় প্রার্থনা করা হয়। নিলামগ্রহীতার সাক্ষরিত একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৯ মার্চ পর্যন্ত বালু অপসারণের সময় বৃদ্ধি করেন ইউএনও। কিন্তু ১০ মার্চ ওই নিলাম গ্রহিতা বালু অপসারন করা হয়ে গেছে বলে জানিয়ে সময় বৃদ্ধি না করতে আরেকটি লিখিত আবেদন করেন। তবে এখন বিএনপির ওই নেতা বোল পাল্টে ভিন্ন কথা বলছেন।

এদিকে ১৭ মার্চ সোমবার দুপুরে সরেজমিনে বালিজুড়ী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বালিজুরী-কামালপুর রোড ও বালিজুরী হাই স্কুল রোডে বালুর বিশাল স্তুপ। স্থানীয় কয়েকজন জানান, এগুলোই জব্দকৃত ও নিলামে বিক্রির বালু। এই বালু নিলামে ডেকে নিয়ে বিক্রি না করে নদী থেকে আবারও অবৈধভাবে বালু তুলে বিক্রি করা হচ্ছে। এই নিলামের বৈধ স্লিপ ব্যবহার করে প্রতিদিন ৪০-৫০ ট্রাক অবৈধ বালু বিক্রি করা হচ্ছে।

শ্রীবরদী উপজেলার অধিবাসী ব্যারিস্টার শাহাদাত হোসেন বলেন, চতুরতার সাথে জব্দকৃত বালু সরানোর সময় বৃদ্ধি করে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে সীমান্তবর্তী বালিজুড়ী, রাঙাজান ও খাড়ামোড়া এলাকার সোমেশ্বরী নদীর আশপাশের এলাকা। কয়েকদিনের মধ্যে স্থানীয়দের সাথে জনআন্দোলন করা হবে। আগামী ২০ তারিখের পরে উচ্চ আদালতে বিষয়টি সুরাহা চেয়ে আমি নিজে রিট পিটিশন দায়ের করবো।

অন্যদিকে নিলাম গ্রহীতা আব্দুর রহিম দুলাল বলেন, সময় বর্ধনের আবেদন করলেও আইনগত জটিলতা হবে মনে করে আবার সময় বৃদ্ধি না করার আবেদন দেই। তবে দলীয় নেতাকর্মীদের চাপে মৌখিকভাবে দ্বিতীয় আবেদন নাকচ করি। পরে কি হয়েছে আমি জানিনা। বর্ধিত সময় আগামীকাল শেষ হবে। এর পরেও বালি অপসারন না হলে আমি ইউএন এর সাথে কথা বলবো আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শেখ জাবের জানান, নিলাম গ্রহীতার ১০দিনের আবেদনের প্রেক্ষিতে তদন্ত করে ৭দিনের সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। এখানে অন্য কোন উদ্দ্যেশ্য নেই। তবে অবৈধ বালু বৈধ কাগজে বিক্রি করার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। কোন অবস্থাতেই অবৈধ বালু উত্তোলনের সুযোগ নেই। নিজের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিরুদ্ধে তিনি বলেন, অভিযোগ সত্য নয়।

শেরপুরের জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, প্রশাসন অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। অবৈধ কাজের সাথে যারাই জড়িত থাকবে প্রশাসন হোক আর সিভিল হোক তারা তাদের কর্মফল ভোগ করবে। আর শ্রীবরদীর জব্দকৃত বালুর নিলাম ও অপসারণ নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে সেটি আমি খতিয়ে দেখছি।

আরো খবর

আপনার মতামত দিন