শেরপুর কন্ঠ ডেস্ক: শেরপুরের ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের পাদদেশে অনুষ্ঠিত হলো ব্যতিক্রমী হিম উৎসব।
গত ২৬ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার, ১২ পৌষ হিমেল সন্ধ্যায় শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার সুশীল সমাজের আলোকিত একঝাঁক মানুষ মিলিত হয়েছিলেন প্রাণের এ হিম উৎসবে।
শ্রুতি ও স্মৃতিযাপনের বারান্দায় আনন্দঘন সন্ধ্যায় পরস্পরের মাঝে সুতো গেঁথে দিয়েছিলেন নালিতাবাড়ীর কৃতি সন্তান, সান্তা মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এবং গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞ ড. ইসলাম শফিক এবং বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ড. জাকিয়া সুলতানা।
ড. শফিক এর আয়োজনে শহরের কাচারিতে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বরেণ্য এবং গুণিজনদের এক বর্ণিল মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল।
হালের কর্পোরেট পুঁজির দাপুটে সমাজে শেকড়ের ঘ্রাণ পৌষের সন্ধ্যায় পরিবার পরিজন নিয়ে পিঠাপুলির আয়োজনে এক আত্মীয়তার আবহ দুয়ার খুলে দেয়। আয়োজনে ভাপা, চিতই, পোয়া পিঠার আয়োজন ছিলো একাংশে।
মূলত আগামী প্রজন্মকে পাহাড়ি জনপদের শেকড়ের যাপনের সাথে অভ্যস্ত রাখা পাশাপাশি নিজেকে হারিয়ে ফেলার এই জামানায় শেকড়ের ডাকে সাড়া দেবার এক অনবদ্য অভিপ্রায় পরস্পরের এই হিম উৎসব।
পরস্পর প্রাঙ্গণ একটি সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা এবং সমাজ বিনির্মাণের একটি যৌথ প্রয়াস।
নালিতাবাড়ীতে পরস্পরের যাত্রা কুয়াশার ওপারে সোনালী রোদ্দুরের হাতছানি। পুনশ্চ যেন আমাদের শেষ থেকে শুভারম্ভের প্রতীক।
মূল আয়োজনে ছিলো শিশু কিশোরদের অংশগ্রহণে আনন্দ সময়ের ছড়া, গান, কবিতা পাঠ। স্থানীয় কবি শহিদুল ইসলাম ফকির হিম উৎসবের স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন। পর্বটি পরিচালনা করেন শাশ্বত ইসলাম এবং রিয়াদ আল ফেরদৌস।
পরবর্তী পর্যায়ে ‘নালিতাবাড়ীর শিক্ষা, সাহিত্য, ক্রিড়াঙ্গণের ঐতিহ্য এবং আজ ও আগামীর সম্ভাবনা সংকট’ শিরোনামে এক সুধী আলাপন অনুষ্ঠিত হয়। এতে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন বিশিষ্ট আইনজীবী এডভোকেট সুধাংশু কালোয়ার, ক্রিড়াঙ্গণের কিংবদন্তি অসীম দও হাবলু, বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী এবং একসময়ের কৃতি ফুটবলার এম.এ হান্নান, প্রিন্সিপাল মুনিরুজ্জামান, কবি জ্যোতি পোদ্দার, কেয়া নকরেক, মো. ফাত্তাহ, মো. মোজাম্মেল হক, মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসান আদর্শ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ এর অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম উজ্জল, সাদরুল আহসান মাসুম, মোস্তাফিজুর রহমান বকুল তালুকদার, নজরুল ইসলাম, সাংবাদিক এমএ হাকাম হীরা প্রমুখ।
আলোচনা অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন নবরূপী ক্রিড়া ও সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর সভাপতি বাবু জয়জিৎ দত্ত শ্যামল।
পরবর্তী পর্বে নালিতাবাড়ীর ক্রিড়া, শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং উদ্যোক্তা পর্যায়ে অসামান্য ভূমিকা রাখা কয়েকজন মানুষকে সম্মাননা স্মারক এবং উত্তরীয় প্রদান করে হিম উৎসব আয়োজক কমিটি।
ক্রিড়া ও সমাজ সেবায় বাবু অসীম দও হাবলু, শিক্ষায় ও সমাজসেবায় বাবু তুলসী দাস পোদ্দার, কৃষি উন্নয়নে সেন্টু হাজং, তরুণ উদ্যোক্তা এবং সফল ফ্রিল্যান্সার মো. মিনহাজ উদ্দীন এবং সংস্কৃতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখার জন্য নালিতাবাড়ীর বাউল তারা মিয়াকে সম্মাননা ক্রেস্ট এবং উত্তরীয় প্রদান করেন আমন্ত্রিত অতিথিরা।
এসময় আয়োজনের পক্ষ থেকে তাদের উপর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরেন রিয়াদ আল ফেরদৌস।
মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ের শিল্পীরা গান পরিবেশনা করেন। স্থানীয় শিল্পীদের মাঝে মাকসুদুল হক শিখর, মোস্তফা, সবুজ, ইয়াকুব, সদানন্দ সরকার, মো মোজাম্মেল হক গান পরিবেশনা করেন।
এরপর নালিতাবাড়ীর সুসন্তান পাওয়ার ভয়েস খ্যাত হাসনা হেনা এবং লোক গবেষক সরদার হিরক রাজা চমৎকার গান পরিবেশনা করেন। স্মৃতি, সায়মা, আদিবা, তৃপ্তি সাহা অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করেন।
আয়োজনের মূল আকর্ষণ দুই বাংলার বিখ্যাত বাউল শিল্পী সাগর বাউল ভাব সঙ্গীত পরিবেশনা করেন। বাউল সঙ্গীত সন্ধ্যাটি পরিচালনা করেন ড. ইসলাম শফিক এবং ড. জাকিয়া সুলতানা লুনা।
হিম উৎসব আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতা ও সমন্বয় করেন রুকনুজ্জামান জুয়েল, সজল কর্মকার, জাহিদ হোসেন প্রমুখ।
হিম উৎসব আয়োজনের সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক এবং সংস্কৃতিমনা জনাব এম.এ হাকাম হীরা। মনোমুগ্ধকর এই আয়োজন সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে প্রাণ প্রাচুর্যে পরিপূর্ণ হয়ে উঠে।